উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য যে ৯টি দক্ষতার প্রয়োজন - 9 Skills Need For an Entrepreneur



আমাদের মধ্যে অর্জিত হচ্ছে ডিজিটাল সেক্টর এর বেসিক গুলি। পাশা পাশি বিজনেস, চাকুরির জন্য মানুষ অর্জন করছেন দরকারি দক্ষতা। উদ্যোক্তা হওয়ার ইচ্ছে টা জেগেছে অনেকের মধ্যেই। তবে শুধু ইচ্ছে কিংবা টাকা থাকলেই হবেনা, নিচের এই ৯ টি বিষয় আপনাকে হতে হবে দক্ষ। জানতে হবে এই বিষয় গুলি যা কিনা একজন উদ্যোক্তা হিসেবে আপনাকে নিয়ে যাবে উন্নতির চূড়ায়।

১। যোগাযোগঃ
একজন উদ্যোক্তা হতে গেলে আপনাকে অবশ্যই যোগাযোগ এ পারদর্শী হতে হবে। আর সেটা হতে হবে প্রায় সকল শ্রেণীর মানুষদের সাথে। সামাজিক আর যোগাযোগ মাধ্যম গুলি তে সুচারু হয়ে জেনে ফেলতে হবে সবার মনের খবর! ব্যাপার সত্যি, কারণ আপনাকে আপনার নিজের কিছু শুরু করতে হলে সবার আগে বুঝতে হবে অন্য দের।
> অন্যদের মোটিভেট করতে শিখুন। তবে তার জন্য অবশ্যই আপনার ভেতরে তেমন কিছু থাকতে হবে। এখানে খালি কলসি হয়ে শুধু ঠন ঠন করে বাজলে চলবে না। তাই বাড়াতে থাকুন আপনার দক্ষতার ঝুলি আর অন্যদের কে তার বেসিস এ মোটিভেট করুন।
> বুঝুন নানান কালচার ও মানুসিকতা। সমাজের সব মানুষ এক না। যাদের ছোট বেলায় বাবা দের চাকরীর সুবাদে বার বার বদলি হয়ে যেতে হতো নানান জায়গায় প্রতি বছর, তারা খুব ভালই জানেন যে বিভিন্ন পরিবেশে খাপ খাইয়ে নেয়া টা কতটা দরকারি। তবে এই পরিবেশ সব সময় যে অনুকুল হবে তা কিন্তু নয়। তাই বুঝতে চেষ্টা করুন আপনার চারপাশের মানুষ দের, বুঝুন তাদের ঐতিহ্য আর আচার ব্যাবহার। তার পর বিস্তার করুন নিজের প্রভাব।

> লিডারশিপ। এটা এক কথায় অসাম একটা ব্যাপার কিন্তু দুর্ভাগ্যের ব্যাপার হল চাইলেই এইটা নিয়ে আপনি ভাব মারতে পারবেন না, কারণ এ ব্যাপারে দক্ষতা টা কাচের গ্লাসে ট্যাং এর শরবত এর মতই ভিশন ভিসিবল। অদক্ষ হয়ে লিড করতে গেলেই ধরা! কিন্তু যদি অভিজ্ঞতার আলোকে, দরকারি শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে পারেন শো করতে আপনার লিডারশীপ এবিলিটি, তাহলে পরের পথ টুকু অতিক্রম করা খুব কষ্টের হবে বলে আমার মনে হয়না।
> কনফিডেন্স। এটা সব থেকে বড় জিনিস। চায় আপনি দক্ষ হোন বা না হোন, আপনি যেটা, সেটার উপর যদি আপনার ভরসা না থাকে তাহলে আর লাইফে এগোনো যাবে না। আপনার নিজের কনফিডেন্স যেমন আপনাকে মোটিভেট করে, তেমনি আপনার পরিবার কে ভরসা দেয় আর আপনাকে দেখে অন্যরা সামনে এগোনোর আশা খুঁজে পায়।
২। ফাইন্যান্সঃ
কথাটা শুনলেই ক্যামন বুক শুকিয়ে যায়। ভাবনায় চলে আসে কমার্স কমার্স একটা কিছু। ৩-৪ পাতা জুড়ে অঙ্ক সহ আরও নানান কিছু। তবে আপনাকে একজন উদ্যোক্তা হতে হলে অবশ্যই ফাইনান্স জানতে হবে। তবে আশার কথা এই যে, আমাদের পড়ে আসা ব্যাপার গুলি খুব একটা কাজে লাগবে না, আই মিন এইখানে আধুনিক হিসাব কিতাব কেই বেশি প্রাধান্য দেয়া হবে ৩-৪ পাতার অংক গুলির থেকে।
আপনাকে জানতে হবে কি ভাবে টাকা খরচ করবেন, কোথায় কোথায় ইনভেস্ট করবেন, কি পরিমানে কখন ইনভেস্ট করবেন, মুনাফার হিসেব আর প্রাপ্তি কাল এর সময়, কস্ট মিনিমাইজিং, লওয়ার কস্ট এ হাই কুলালিটি প্রোডাক্টিভিটি ইত্যাদির বেসিক থেকে শুরু করে অ্যাডভান্স লেভেল পর্যন্ত আপনাকে জানতেই থাকতে হবে।
৩। নিজের ব্র্যান্ডিংঃ
আমাদের সকল কাজের মুলেই তো রয়েছে নিজের একটা ব্র্যান্ডিং, তাইনা? তবে যদি মনে করেন আমার এই পোস্ট়ে পড়ে হয়ে উঠবেন বড় ব্র্যান্ডের মালিক, তবে ভুলে যান। কারণ আমরা এখানটায় যা দিচ্ছি, তা নিতান্তই বেসিক জিনিস পত্তর। হয়তবা চাইলেও খুব উপরের লেভেল এর জিনিস গুলি আমরা দিতে পারবনা, আর দিলেউ সবার নেয়ার ক্ষমতা থাকবে না কারণ এই প্রসেসটাই ব্যাপক। আপনি আপনার প্রোডাক্ট বা সার্ভিস সম্পর্কে খুব জানুন, খুজুন, খুড়ুন আর পড়ুন কারণ এর কোন বিকল্প নেই। ইউটিউব এ যান, বাংলা, ইংলিশ, হিন্দি যত ভাষা জানেন, পারেন সব ভাষায় সফল উদ্যোক্তাদের কথা শুনুন, শুনুন বড় বড় জায়গার মানুষ দের স্পিচ। ব্র্যান্ডিং নিয়ে আর্টিকেল পড়ুন, লিখুন নিজের ব্লগ, তৈরি করুন অসাম সব আইডিয়া, কন্টেন্ট, মিডিয়া, প্রচার করুন সব জায়গায়। এই জিনিস টা আসলে তিনটা জিনিস এর একটা ইউনিক কম্বিনেশান যেমন,
আপনি যা শিখবেন+ আপনি যা দেখবেন + আপনার নিজের বিবেচিত মতামত বা অভিজ্ঞতা = আপনার নিজের ব্র্যান্ডিং।
একমাত্র ব্যাপক অভিজ্ঞতাই আপনাকে দিতে পারে একটি প্রোপার সফল ব্র্যান্ডিং এর স্বাদ।
Achive

৪। ডিজিটাল মার্কেটিংঃ
কমিউনিকেশান এর পড়ে এটা খুবি দরকারি একটা দক্ষতা। কারণ আপনি শুরু তে যাই করেন তার সকল দায় ভার নিতে হবে আপনাকে। সুতরাং আপনাকে জানতে হবে এটার বেসিক থেকে ইন্টারমেডিয়েট পর্যন্ত, আর কাজ করতে করতে হয়ে যাবেন প্রফেশনাল। হয়তো একটা সময় অন্য কাউকে হায়ার করে নেবেন এটা করার জন্য, কিন্তু সেটা যেনো হয় কাজের চাপে, আপনি পারেন না সেই জন্য নয়।
৫। নেটওয়ার্কিংঃ
এই কথা টা আপনি আমার প্রায় সকল পোস্ট এ পাবেন। কারণ এটা আসলেই খুবি দরকারি একটা দক্ষতা। ইভেন যদি মারভেল কিংবা ডিসি এর সুপার হিরো মুভি গুলির কথা চিন্তা করেন, অ্যাভেঞ্জারস, কিংবা জাস্টিস লীগ এর মতো মুভি গুলিতেউ কিন্তু চলছে নেটওয়ার্কিং। তারা একেক জন সুপার হিরো হয়ে সবাই মিলে কাজ করছে কোন অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে আর সেখানে আমরা তো আম জনতা! তাহলে আমাদের নেটওয়ার্কিং টা কত দরকার একবার ভেবে দেখেন। আমি আগেও বলেছি, নেটওয়ার্কিং মানেই সবাই কে ধরে ধরে ফ্রেন্ডলিস্ট এ অ্যাড করা না। এটার মানে আপনার কাজের পরিধি তে, আপনার ভালো লাগার টপিক ওয়াইস, আপনার প্রয়োজনীয় সেক্টর গুলির মানুষ দের সাথে গড়ে তুলুন প্রাকৃতিক সম্পর্ক। চেষ্টা করুন কাজ গুলি মিলে মিশে করতে। কাজে অন্য কে হেল্প করেন, অন্যের কাছে হেল্প চান। ব্যাপার টা খুবি অর্গানিক। যখন আপনি কাজে নামবেন আপনার ব্যাবসা নিয়ে তখন সব কিছুর দায়িত্বে থাকবেন একাই। আর তাই এসকল বন্ধু মহল হতে পারে আপনার জন্য বিশাল হেল্প। কিংবা আপনি তাদের জন্য দরকারি কোন সাহায্য। সব একাই করবো, একাই খাবো মানুষিক রোগে অনেকে ভুগলেউ আসলে এটা করার উপায় নেই। তবে কারও সাথে কাজ করতে হলে নিজের অবস্থান সম্পর্কে সচেতন থাকা দরকার বৈ কি।
৬। অটোমেশানঃ
এটা বাংলা করলে হয় স্বয়ংক্রিয়তা। আপনার কাজের স্বয়ংক্রিয়তা নিয়ে আসতে হবে। একি কাজ বার বার করা আপনাকে মোটেও প্রোডাক্টিভ করে তোলে না বরং যে কাজ টি খুব সহজেই সফটওয়ার দিয়ে করে ফেলে যায় অল্প সময়ে, সেটা সেভাবে করাটাই হল অটোমেশান। এতে করে কাজটাও ফাস্ট হবে, আর ভুলের সংখ্যা কমে যাবে। সময় গুলি কে পারফেক্টলি ভাগ করে নেয়া, কাজগুলি ছক আকারে গুছিয়ে সেগুলির স্টারটিং পয়েন্ট আর এন্ডিং পয়েন্ট সেট করা। কি ভাবে কাজ করলে সেগুলি ফাস্ট হবে তা নির্ধারণ করা। সব থেকে আপডেটেড সিস্টেম কিংবা সফটওয়্যার ব্যাবহার করে কাজের গতি কে বাড়িয়ে দেয়া, কাজ গুলি সঠিকভাবে দক্ষতা অনুযায়ী সবার মধ্যে ভাগ করে দেয়া, প্রাইওরিটি অনুযায়ী নিজের পার্ট টুকু নিজে করা, সব কাজ এক বারে করতে না যাওয়া থেকে শুরু করে আরও অনেক কিছু অটোমেশান এর মধ্যে পড়ে।
Automation

৭। ডিজাইনঃ
একজন উদ্যোক্তা হতে হলে আপনার রাখতে হবে ডিজাইন সম্পর্কে ধারণা। সেটা হোক কোন গ্রাফিকাল ডিজাইন, কিংবা হোক প্রোটোটাইপ কিংবা বিজনেস মডেল। মাইক্রোসফট পেইন্ট কিংবা
মোবাইলে ইমেজ এডিটিং টা আজকাল আর মার্কেটে প্রফেশনালস দের জন্য চলে না। একেবারে প্রো না হতে পারলেও শিখুন ফটোশপ এর বেসিক্স গুলি, শিখুন কি করে ছোট করে ভিডিও এডিট করতে হয়, শিখুন কাজ করতে কাগজে কলমে। আর সব থেকে বেশি যেটা দরকার, বেশ কিছু সফটওয়ার এর উপর দক্ষতা যেমন মাইক্রোসফট অফিস, ইন্টারনেট, গুগোল, ইত্যাদি।
৮। টেকনিক্যাল টার্মসঃ
জী, টেকনিকাল ব্যাপারগুলোতে দক্ষ হতে হবে। কম্পিউটার, হার্ডওয়ার জিনিস গুলি জানা এবং সঠিক ভাবে পরিচালনা করতে পারা থেকে শুরু করে আপনাকে জানতে হবে কি করে ওয়েবসাইট বানাতে হয়, কি করে তা লঞ্চ করতে হয়। কি ভাবে অনলাইন সার্ভার গুলি কাজ করে, আপনার কাজ রিলেটেড একটা মেশিন কি করে কাজ করে, কারেন্সি, ইত্যাদি সব। না, এগুলির তেমন কোন কোর্স নেই, আর এক দিনেও আপনি সব জেনে যেতে পারবেন না। তবে এগুলি জানতে সময় দিতে হবে, বাধাহীন ঘুড়ে বেড়াতে হবে অনলাইনের জ্ঞানের সাগরে।
৯। শিক্ষাঃ
যদি ভাবেন অনার্স মাস্টার্স করে আপনি এখন মহা জ্ঞ্যানী, তবে ভেবে খারাপ লাগছে যে উক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলি আপনাকে যথাযথ শিক্ষা দানে ব্যর্থ হয়েছেন। শুধু এই পোস্ট এর উপরের ৮ টা জিনিস এর সাথেই নিজের জ্ঞ্যান কে কম্পেয়ার করেন না? বেড়িয়ে আসবে কি জানেন আর কি জানেন না! আর সেসব জানতে প্রতিদিন শিখার কোন বিকল্প নেই। খুব শুখের কথা হচ্ছে, আজকাল দুনিয়া জোড়া শিক্ষার এতো এতো উপকরণ। আপনি চাইলেই ফ্রি ডাউনলড করে ফেলতে পারেন আপনার কাঙ্ক্ষিত বিষয়ের অনলাইন কোর্স। সেটা হোক ইংলিশ শিক্ষা, হোক ডিজাইন, বা মাইক্রোসফট অফিস, কিংবা ওয়েবসাইট বানানর কোর্স। পুরো ভিডিও করে স্পষ্ট ভাষায় তারা বলে দিচ্ছে কি করে কি করা লাগবে! এগুলি গিলতে পারাও একটা দক্ষতা আর তা প্রতিদিন ভাত এর মতো করেই গিলতে হবে! তো, রেগুলার বেসিস এ নতুন নতুন কিছু শিক্ষা টাও উদ্যোক্তাদের একটা বড় বৈশিষ্ট।

আপনি চাকরী করতে চান কিংবা ব্যাবসা। হোক সেটা ছোট কিংবা বড়, এই ৯ টি ব্যাপার যদি রেগুলার চর্চা করেন, আপনার জ্ঞ্যান চলে যাবে একটি স্টাবল লেভেলে যেখান থেকে পুরোই বদলে যাবে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি, ভাবার ধরন আর চিন্তা করার ক্ষমতা। গ্রুপে সবাই বেসিক টা শেয়ার এর সাথে সাথে হয়তো অনেক বড় বড় স্বপ্ন দেখছেন আকাশের উড়ার। কিন্তু আপনি কি জানেন একটা বিমান এর আকাশে সফল উড্ডয়ন এ সব থেকে দরকারি উপাত্ত টি কি? না সেটা বিমান এর ইঞ্জিন না, না পাইলট কিংবা তার ফুয়েল। সেটা হল বিমান টি উড়বার আগে সেটার ফিটনেস চেক করার জন্য প্লায়ারস, স্ক্রু ড্রাইভার সহ সিমিলার অন্যান্য যন্ত্রাংশে ভরা ছোট সেই টুল বক্স। কারণ বিমানের ইঞ্জিন যত শক্তিশালী হোক না কেন, ছোট একটি স্ক্রু যদি খুলে পড়ে যায়, তাহলে সেই বিমান এর ধ্বংস অবধারিত। সুতরাং, আজি চেক করে নিন আপনার নিজের ফিটনেস, উদ্যোক্তার বিমানে চড়ে সফলতার আকাশে ডানা মেলে মুক্ত ভাবে উড়ার জন্য। ভালোবাসায় ভালো থাকবেন সবাই।
Written By - Jarin Sultana
Join Our Facebook Group - Entrepreneurship & Business Info