কিভাবে খুব সহজেই কোম্পানি নিবন্ধন করবেন?

Company Registration in Bangladesh


কোম্পানি হচ্ছে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে গঠিত একটি বিধিবদ্ধ সংস্থা। আর মুল উদ্দেশ্য হচ্ছে মুনাফা অর্জন করা।
বাংলাদেশে কোম্পানি আইন অনুযায়ী ৩ ধরনের কোম্পানি নিবন্ধন করা যায়। যথাঃ প্রাইভেট, পাবলিক, বিদেশী কোম্পানি।
কোম্পানি আইন ১৯৯৪ অনুযায়ী, ১৮ বছরের উপরে যে কোন ব্যক্তি কোম্পানি রেজিঃ করতে পারবে।

রেজিঃ পূর্বে আপনাকে জানতে হবে কোম্পানি গঠন করতে কি প্রয়োজন? 


কোম্পানির নামঃ কোম্পানি গঠনের আগে আপনাকে অবশ্যই কোম্পানির নামের অনুমোদন নিতে হবে।
পরিচালকঃ কোম্পানি গঠনের জন্য অন্তত ২ জন পরিচালক রাখা বাধ্যতামূলক। পরিচালক দেশীয় ব্যক্তি / বিদেশী ব্যক্তি হতে পারে। পরিচালককে নুন্যতম ১৮ বছর বয়স হতে হবে এবং পূর্বে ব্যাংক কেলেঙ্কারি, দেউলিয়া, অপরাধ কর্মে লিপ্ত কোন ব্যক্তি পরিচালক হতে পারবে না।
শেয়ার হোল্ডারঃ বাংলাদেশে প্রাইভেট কোম্পানির জন্য নুন্যতম ২ জন এবং সর্বোচ্চ ৫০ জন শেয়ার হোল্ডার থাকতে হবে। পরিচালক ও শেয়ার হোল্ডার একই ব্যক্তি হতে পারে কিংবা ভিন্ন ব্যক্তিও হতে পারে। শেয়ার হোল্ডার কোন ব্যক্তি বা কোন কোম্পানি হতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে 100% স্থানীয় বা বিদেশী শেয়ারহোল্ডিং অনুমোদিত।
অনুমোদিত মূলধনঃ আপনার কোম্পানির অনুমোদিত মূলধন কত হবে তা অবশ্যই মেমোরান্ডাম অব এসোসিয়েশন ও আর্টিকেল অব এসোসিয়েশনে উল্লেখ করতে হবে। এটি মূলত আপনার কোম্পানিতে আপনি কত শেয়ার বা মূলধন বিনিয়োগ করতে পারবেন তার নির্ধারিত অনুমোদন। আপনি যত পরিমান অনুমোদিত শেয়ার বা মূলধন মেমোরান্ডাম অব এসোসিয়েশন ও আর্টিকেল অব এসোসিয়েশনে উল্লেখ করবেন তত পরিমাণই আপনি মূলধন জোগান দিতে পারবেন। তার বেশি মূলধন আপনি কোম্পানিতে বিনিয়োগ করতে পারবেন না।
উদাহরণঃ আপনি অনুমোদিত মূলধনের পরিমান দেয়া ছিল ১ কোটি টাকা। তার মানে হল, আপনার কোম্পানিতে আপনি ১ কোটি টাকার বেশি মূলধন সংগ্রহ করতে পারবেন না বা বিনিয়োগ করতে পারবেন না।
পরিশোধিত মূলধনঃ বাংলাদেশে কোম্পানি গঠনের জন্য নুন্যতম ১ টাকা পরিশোধিত মূলধন থাকতে হবে। পরিশোধিত মূলধন কোম্পানি গঠনের পরে যে কোন সময় বৃদ্ধি পেতে পারে।
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ কোম্পানি নিবন্ধনের পূর্বে আপনাকে অবশ্যই কোম্পানির নামে নির্দিষ্ট ঠিকানা নিবন্ধন করে নিতে হবে।
মেমোরান্ডাম এন্ড আর্টিকেল অব এসোসিয়েশনঃ কোম্পানি গঠনের পূর্বে অবশ্যই আপনাকে মেমোরান্ডাম এন্ড আর্টিকেল অব এসোসিয়েশন [memorandum of association (MoA) and articles of association (AoA)] তৈরি করে নিতে হবে।
মেমোরান্ডাম এন্ড আর্টিকেল অব এসোসিয়েশন মূলত কোম্পানির গঠনতন্ত্র ও কার্যক্রম নিয়ে লিখিত। আপনি নিজে না পারলে অবশ্যই কোন বিজ্ঞ আইনজীবীর পরামর্শ নিন।

অংশীদারি ব্যবসায়ের চুক্তিপত্র কিভাবে করবেন?

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

বাংলাদেশে কোম্পানি গঠনের জন্য / রেজিঃ করার জন্য তথ্য সম্বলিত নিম্নোক্ত কাগজপত্র প্রয়োজন।

*কোম্পানি নাম - কোম্পানির জন্য নিবন্ধিত নাম। 
মেমোরান্ডাম এন্ড আর্টিকেল অব এসোসিয়েশন - ৭ টি ধারা ও ৪০০ শব্দের মধ্যে মেমোরান্ডাম এন্ড আর্টিকেল অব এসোসিয়েশন আরজেএসসি এর কাছে জমা দিতে হবে। 
শেয়ার হোল্ডারদের বিবরণ - শেয়ার হোল্ডারদের বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয় পত্র সংযুক্ত করতে হবে। 
পরিচালকদের বিবরণ - ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর সংযুক্ত করতে হবে।
নিবন্ধিত ঠিকানা - কোম্পানির জন্য নিবন্ধিত ঠিকানা সংযুক্ত করতে হবে। 
স্বাক্ষরিত IX ফর্ম ও গ্রাহক পৃষ্ঠা - পিডিএফ স্ক্যান কপি জমা দিতে হবে।


নিবন্ধন প্রক্রিয়া

বাংলাদেশে কোম্পানি নিবন্ধন পদ্ধতি আংশিকভাবে অনলাইনে করতে হয়।
ধাপ ১ - নামের ছাড়পত্র 
বাংলাদেশে কোম্পানি গঠনের জন্য প্রথম ধাপ হল, আপনার প্রস্তাবিত কোম্পানির নামের ছাড়পত্র নিতে হবে। আপনাকে প্রথমে www.roc.gov.bd ভিজিট করে ইউজার নেম তৈরি করতে হবে। তারপর আপনি প্রস্তাবিত কোম্পানির নামের ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করতে হবে। ছাড়পত্রের জন্য আবেদনের পরে আপনি ব্যাংকের পেমেন্ট স্লিপ পাবেন এবং নির্দিষ্ট ব্যাংকে ৬০০ টাকা জমা করে দিতে হবে। পেমেন্ট জমাদানের পর আপনি আরজেএসসি তে লগ ইন করতে পারবেন এবং নামের ছাড়পত্র সংগ্রহ করতে পারবেন।
বিঃ দ্রঃ যখন আরজেএসসি এর ওয়েবসাইট ব্রাউজ করবেন তখন মজিলা ফায়ারফক্স ব্রাউজার ব্যবহার করবেন।

User Creation

দ্রুত নামের ছাড়পত্র পেতে যা করনীয়ঃ 
* বর্তমানে বিদ্যমান কোন নামের অনুরূপ করবেন না।
* ট্রেড মার্কের বিধি নিষেধ লঙ্ঘন করবেন না।
* অশ্লীল কোন নাম ব্যবহার করবেন না।
* ইতিমধ্যে সংরক্ষিত নয় এমন নাম ব্যবহার করুন।
৬ মাসের জন্য নামের ছাড়পত্র পাবেন , এর মধ্যে আপনাকে কোম্পানি রেজিঃ করে নিতে হবে। অন্যথায় ৬ মাস পরে যে কেউ এই নাম ব্যবহার করতে পারবে।
ধাপ ২ - ব্যাংক একাউন্ট খোলা ও পরিশোধিত মূলধন জমা করা
প্রস্তাবিত কোম্পানির বৈদেশিক শেয়ারহোল্ডিং থাকলেই কেবল এই পদক্ষেপটি প্রযোজ্য।
ব্যাংকে পরিশোধিত মূলধন জমা করা হলে ব্যাংক আপনাকে নগদীকরন সার্টিফিকেট প্রদান করবে। এই সার্টিফিকেট টি আরজেএসসি কে প্রদান করতে হবে।

ধাপ ৩ - কোম্পানি নিবন্ধন 
এটি হল কোম্পানি নিবন্ধন এর জন্য শেষ ধাপ। গুছিয়ে নেয়া প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র আরজেএসসি এর কাছে পেশ করতে হবে।
সব প্রক্রিয়া শেষ হলে রেজিঃ ফি প্রদানের জন্য আপনি একটি ব্যাংক পেমেন্ট স্লিপ পাবেন। ব্যাংকে পেমেন্ট করা হয়ে গেলে আপনার কাজ শেষ। কোম্পানির সার্টিফিকেট পাওয়ার জন্য আপনাকে আরজেএসসি নির্দেশনা অনুসরণ করতে হবে। আরজেএসসি আপনার সকল তথ্য ও কাগজপত্র নিরীক্ষা করবে। সব কিছু ঠিক থাকলে আরজেএসসি আপনাকে সার্টিফিকেট প্রদান করবে।